এলোমেলো ভাবনা।

September 3, 2018 2:53 pm0 commentsViews: 49

গতকালকে জুম’আর নামাজ শেষ করে মসজিদ এর বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখলাম, তিনটি ছেলে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। প্রথমে তাদের কথায় তেমন একটা মনোযোগ না দিলেও পরে যখন শুনলাম, তারা ডাক্তারদের নিয়ে কথা বলছে, তখন একটু ভাল করে শুনতে আগ্রহী হলাম।

তাদের কথার মূল বক্তব্যটা শুনে প্রথমে একটু ধাক্কা খেলেও পরে নিজেকে সামলে নিলাম।  একজনের মতে, ডাক্তারদের মধ্যে মানবিক বোধ বলতে কিছুই নেই, তারা রীতিমত কসাই।

আরেকজনের মতে ডাক্তারি মানে হল, টাকা আর টাকা। টাকার জন্য নাকি তারা ৫ মিনিটের বেশি রোগী দেখেন না। ফিস ও বেশি নেন।শেষের জনের মতে, ডাক্তাররা দেশের মানুষের টাকায় লেখাপড়া করে সেটা ভুলে যায়, তাই জনগণের সেবা করে না। আমি তবুও তাদের কথাগুলোর উত্তর দিতে গেলাম না। কারণ যেখানে ডাক্তারদের নিয়ে ৮০% সাধারণ মানুষের ধারণাই এমন, সেখানে আমি কয়জনকে সঠিক ধারণা দিতে পারব? তাদের কথা শুনে প্রথমে আহত হলেও,পরে তাদের কথাগুলোই সত্য বলে মনে হল।

ডাক্তারদের মধ্যে আসলেই মানবিক বোধ বলতে কিছু নেই। যদি থাকত, তাহলে কি আর পিতামাতা,পরিবার-পরিজন আর স্ত্রী-সন্তানাদি ফেলে দিনরাত হাসপাতালে পড়ে থাকত! হাসপাতালে থাকার কারণে কোন পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এজন্য তাদেরকে অসামাজিক বলা হলেও মোটা চামড়া ভেদ করে এ সব অপমান মাথা পর্যন্ত পৌঁছায় না।
ঈদ হোক কিংবা পূজা হোক, হোক রাতের ৩টা কিংবা দুপুরের ৩টা, মানুষের অসুস্থতা কি আর সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলে? অমানবিক না হলে কি ডাক্তাররা আর এ সময়ে হাসপাতালে পড়ে থাকে!
সরকারি হাসপাতালের যে ওয়ার্ডগুলোতে ৫ মিনিটে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসে, গন্ধে বমি চলে আসার উপক্রম হয়, সে ওয়ার্ডগুলোতে ডাক্তাররা দিনরাত মুখ বুঁজে পড়ে থাকে, ওইখানেই একই সাথে চলতে থাকে তাদের খাওয়াদাওয়া আর লেখাপড়া।
এ সবই হল ডাক্তারদের অমানবিকতার প্রমাণ।

ডাক্তার-রা অবশ্যই কসাই। কসাই বলেই না ৮-১০ ঘন্টা টানা দাঁড়িয়ে থেকে অস্ত্রোপচার করে। আর মানুষজন যখন কসাই বলে, তখন অসম্ভব ভাল লাগায় মনটা ভরে যায়। নিজেদের গরু মনে করে ডাক্তারদের কসাই বলে সম্মান দেওয়ার মতন উদারতা আর কয়জন মানুষের আছে!

ডাক্তারি মানে অবশ্যই টাকা আর টাকা। তবে কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো,কোন প্রফেশনটা টাকার সাথে সম্পর্কিত না..?? বিনা-বেতনে কেউ কি ১০-১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে রাজি আছেন?
কিন্তু একজন ডাক্তার যখন ট্রেইনি হিসেবে থাকেন,তখন এ কাজটিই করেন। এমনকি ২৪-২৬ বছর বয়সে যখন সবাই রোজগার করতে শুরু করেন, তখন একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট প্রফ আর পোস্ট গ্রাজুয়েশন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। জীবনের ২০টা বছর পড়ালেখা করার পর যখন আয় করা শুরু করেন, তখন শুরু হয় অন্যদের চুলকানি।

ডাক্তার-রা যে ফিস বেশি নেন এবং সময় কম দিয়ে রোগী দেখেন, এটাও সত্য কথা। বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে গেলে, ভাল জিনিসের দাম তো একটু বেশি হবেই। আরেকটা ব্যাপার হল, ৫ মিনিটে রোগ নির্ণয় করে এই ৫০০ টাকা কামানোর জন্য তাকে ২০ বছর ধরে কষ্ট করে, খেয়ে না খেয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে। আর একজন রোগীকে আধা ঘন্টা সময় নিয়ে দেখলে, বাকিদের কখন দেখবে সেটাও চিন্তার বিষয়।
আমি এমনও দেখেছি, রোগী বেশিক্ষণ দেখার কারণে চেম্বারের বাইরে বসে থাকা লোকজন ডাক্তারকে বাপ-মা ধরে গালি দিচ্ছে। সমস্যাটা কোথায়! বেশিক্ষন রোগী দেখলেও দোষ, না দেখলেও দোষ। আর মানুষজন ৪০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে iphone5, iphone6 কিনতে পারলেও নিজের শরীর রক্ষার জন্য ৫০০ টাকা খরচ করতেও কার্পণ্য বোধ করেন। আমার জানা মতে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ফিস হল ৫০০ টাকা। একজন এমবিবিএস ডাক্তার ফিস হিসেবে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা নেন। আপনার না পোষালে অন্য কোথাও গেলেই তো পারেন, দামি ডাক্তার এর চেম্বারে কি নিজের ইচ্ছাই এসেছেন, না অন্য কেউ দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে এসেছে?
আর এ রকম ঘটনা খুব কমই আছে, যেখানে টাকার জন্য ডাক্তার রোগীদের চিকিৎসা দেন নি..মূলত দরিদ্র রোগীদের প্রায় সব ডাক্তার-ই বিনামূল্যে চিকিৎসা দেন, কিন্তু অধিকাংশ সময় সেটা অপ্রকাশিত থেকে যায়।

আর সব থেকে বড় সত্য যেটা, সেটা হল ডাক্তারই কী শুধু জনগণের টাকায় লেখাপড়া করে? অন্যরা বুঝি করে না? তাহলে কেবল মাত্র ডাক্তারদের কেন কথা শুনতে হবে?

অবশ্য যারা এ সব কথা বলেন, তাদের আবার অনেকেই নিজের ছেলেমেয়েকে কসাইগারে পাঠানোর জন্য উঠেপড়ে লাগেন। তাদের ছেলেমেয়েকে কসাই বানাতে পারলেই যেন তাদের জীবন সার্থক। আর বিয়ের বাজারে পাত্রী খোঁজার সময় সবার আগে খোঁজ লাগান ডাক্তার পাত্রীর জন্য। এতই যখন ঘৃণা তাদের প্রতি, তাদেরই কাতারে সামিল হতে আবার এত উৎসাহ কেন?

আমি অস্বীকার করছি না, সব ডাক্তার-ই সৎ..অসৎ ডাক্তার-ও আছে..কিন্তু সামান্য কিছু অসৎ ডাক্তারের জন্য কেন বাকিদের কথা শুনতে হবে..?? কেন কারনে-অকারনে মানুষ ডাক্তারদের গায়ে হাত তুলবে..?? আর যারা এ ধরণের কাজগুলো করে,তাদের বংশের পরিচয় তাদের কাজের মধ্যেই ফুটে উঠে..

আমি খুব কাছ থেকেই নিজের সহপাঠীদের দেখি,যখন তারা তাদের শত ব্যস্ততার মাঝেও গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখাতে আসা অথবা হাসপাতালে আসা আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দৌড়াদৌড়ি করে..এমনকি পরীক্ষার সময়েও এর ব্যতিক্রম হয় না..

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সচেতন করা..আপনারা ডাক্তারদের প্রাপ্য সম্মানটা দিতে না পারেন,কিন্তু কখনোই অসম্মান করবেন না..

কারণ আপনি জানেন না,আপনাকে চিকিৎসা দেওয়ার ওই আসনটা-তে বসার জন্য একজন ডাক্তারকে কত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে,কত কাঠখড় পুড়িয়ে,কত ত্যাগ স্বীকার করে আসতে হয়েছে..

 

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 1366 White Plains Road, Apt. 1J, The Bronx, New York-10462

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com