মোদী’র পরবর্তী টার্গেট ত আসাম। ভারতীয় দালাল’রা কার পক্ষে লড়বে।
।।সাবিনা আহমদ।।
টার্গেটঃ ৪০ লাখ আসামবাসী যাদের মেজোরিটি মুসলমান, এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাভাষী হিন্দু।
বিষয়ঃ ভারতীয় নাগরিকত্ম প্রমান। আসামের ৩৩ মিলিয়ন বা ৩.৩ কোটি জনগনকে প্রমান করতে হচ্ছে যে তারা বা তাদের পূর্বপুরুষ ১৯৭১ এর আগে থেকেই ভারতীয় নাগরিক। এ ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে তাদের দেখাতে হচ্ছে পুরাতন বার্থ সার্টিফিকেট, জমিজমার দলিলপত্র, এমনকি রেশন কার্ড যেখানে তাদের পূর্বপুরুষদের নাম আছে। লিখিত প্রমাণাদি দেখাতে না পারলে তাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে গন্য করা হচ্ছে।
বিশেষ তারিখঃ অগাস্ট ৩১, ২০১৯। আর মাত্র দুই সপ্তাহের মাঝেই নাগরিকত্ম প্রমানের ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশানের প্রসেস সম্পূর্ণরূপে শেষ হবে।
প্রমানাদি দেখানোর পরেও প্রচুর মুসলমান ভারতীয় নাগরিকের লিস্ট থেকে বাদ পড়েছে। এমনও দেখা গেছে একই পরিবারের মা-মেয়ে বাদ পড়লেও বাবা আর বাকি সন্তানাদি ভারতীয় নাগরিকের লিস্টে আছে। যা আসামের নাগরিকত্বের ভেটিং প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ আর সন্দেহজনক করেছে।
ইতিমধ্যে নাগরিক লিস্টের বাইরে থাকা ৪০ লাখ জনগনের বিরুদ্ধে লিগ্যাল একশান নেয়ার জন্য একদিকে ট্রাইবুনাল এর কার্যপ্রণালী জোরেশোরে শুরু হয়ে গেছে আর অপরদিকে তৈরি করছে যাদের ইলিগ্যাল হিসাবে ট্রাইব্যুনাল শেষ রায় দিবে তাদের রাখার জন্য বিশাল বন্দী শিবির বা ডিটেনশান ক্যাম্প।
এরপর কি হবে? হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার প্রমানবিহীন ভারতীয়দের ফরেইন ন্যাশনাল বা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে গন্য করে বাংলাদেশকে এদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিবে। এই প্রচন্ড চাপ উপেক্ষা করার মতন ক্ষমতা আওয়ামী সরকারের নাই।
তবে দেখার ব্যাপার হবে এই ৪০ লাখের মাঝে যেসব হিন্দু আছে তাদের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল কি পদক্ষেপ নেয়, কারন মদির পার্টি বিজেপি ইতিমধ্যে ভারতের সংসদে অভিবাসী লিস্টের মুসলমান বাদে বাকিদের অর্থাৎ হিন্দু, খৃষ্টান, শিখ, জেইন, পার্সি আর বৌদ্ধদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়ে ভারতে রেখে দেয়ার ব্যাপারে আইন পাশ করতে চেয়েছিল। আইনটি লোক সভায় পাশ করলেও রাজ্য সভায় গিয়ে আটকে যায়। কিন্তু এতে বিজেপির নগ্ন চেহারা সবার সামনে চলে এসেছে আর তা হচ্ছে বিজেপি ভারতীয় মুসলমানদের কি পরিমান ঘৃণার চোখে দেখে। তারা ভারত থেকে মুসলমানের সংখ্যা যেভাবে পারে কমাতে চায়। বিজেপির মটোঃ ভারতে থাকতে চাইলে হিন্দু হয়ে যাও, না হলে অত্যাচারে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়।
ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই ৪০ লাখ মানুষকে বাংলাদেশী টারমাইট হিসাবে আখ্যা করে তাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করতে বদ্ধ পরিকর।
দেখা যাবে শেখ হাসিনা/আওয়ামি সরকার কিভাবে এই পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করে। বাংলাদেশে নিজের জান নিয়ে পালিয়ে আশা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেইসব ভারতপ্রেমী আল-বাঙ্গাল এতদিন নোংরা কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করে আসছে, রোহিঙ্গাদের গালি দিচ্ছে, অখণ্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর তারা কিভাবে মোদী দাদার এই বাঙ্গাল পুশব্যাকের উপহার গ্রহন করে তা দেখতে চাই। আসলেও যদি বিতাড়িত এসব মানুষ বাংলাদেশে এসে ঢুকতে বাধ্য হয় তাদের কিভাবে আর কোথায় বাংলাদেশ আশ্রয় দেয়, সেটাও দেখার বিষয় হবে।
কেউ কি বলতে পারবেন এই ব্যাপারে বাংলাদেশ আদৌ চিন্তিত কিনা? এই নিয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা? বাংলাদেশের সুচিন্তিত নাগরিকবৃন্দের এই ব্যাপার নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা আছে কি?